বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
নতুন আসা রোহিঙ্গাদের কারণে সংকটের চাপ আরও বাড়ছে-উপদেষ্টা ফারুক জানা গেল এইচএসসির ফল প্রকাশের সম্ভাব্য সময় গণঅভ্যুত্থানে নিহত ৭০৮ জনের তালিকা প্রকাশ, বাদ গেলে জানানোর অনুরোধ ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ, ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না: সালাহউদ্দিন রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের একার উদ্বেগের বিষয় নয়: কমনওয়েলথ মন্ত্রীদের বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা শেয়ার বাজারে কারসাজির কারণে সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হয়েছে , স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল জেনারেল আজিজের দুই ভাইয়ের “আমি নিশ্চিত, আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই” চকরিয়ায় ডাকাতের গুলিতে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট তানজিম নিহত: ৩ ডাকাত আটক

চট্টগ্রামে ৬১টি বধ্যভূমির ৫৮টিতেই স্মৃতি চিহ্ন নেই

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ওয়ার্লেস কলোনির মোড়ে টিএনটি অফিসে ছিল ২০ বেলুচ রেজিমেন্টের ক্যাম্প। এর কয়েক গজ দূরে ছিল জল্লাদখানা। এই জল্লাদখানা বর্তমানে পূর্ব পাহাড়তলী বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম এই বধ্যভূমিতে ১০ হাজারের বেশি বাঙালিকে হত্যা করা হয় বলে দাবি করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মুক্তিযোদ্ধা ড. গাজী সালেহ উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে দোহাজারী নাজির হাট ট্রেন হতে নামিয়ে বাঙালিদের এই জল্লাদখানায় এনে হত্যা করা হতো। বধ্যভূমির পেছনে পাহাড়ের ওপর নজির আহমেদ চৌধুরীর একটি সাদা বাংলো ছিল, যেখানে মেয়েদের ধরে এনে ধর্ষণের পর হত্যা করে জল্লাদখানায় হত্যা করা হতো। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এখানে ১০ হাজারের বেশি বাঙালিকে এভাবে ধরে এনে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই স্থানটি এখনও সংরক্ষণ করা হয়নি।’

শুধু পূর্ব পাহাড়তলী বধ্যভূমি নয়, সরকারি হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রাম নগরীতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এ রকম ৬১টি বধ্যভূমি রয়েছে। যেগুলোর একটিও এখনও সংরক্ষণ করা হয়নি। অনেকগুলোতে কোনও স্মতিচিহ্নও নেই। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এই ৬১টি বধ্যভূমির ৫৮টিতেই স্মৃতি চিহ্ন নেই।

৬১টি বধ্যভূমির মধ্যে নগরীর পাহাড়তলীতে আছে ১৫টি, লালখান বাজারে ৬টি, হালিশহরে ৫টি, গোসাইলডাঙ্গায় ৫টি, আন্দরকিল্লায় ৪টি, বাকলিয়ায় ৩টি, রহমতগঞ্জে ২টি, কাট্টলীতে ২টি, পতেঙ্গায় ২টি, বন্দর এলাকায় ২টি, কাটগড়ে ২টি, মুরাদপুরে ২টি, নাসিরাবাদে ২টি, মাদারবাড়িতে ২টি, পাঁচলাইশে ২টি এবং চন্দনপুরা, জয়পাহাড়, চান্দগাঁও, ষোলশহর ও রামপুরায় একটি করে বধ্যভূমি রয়েছে। এসব বধ্যভূমির মধ্যে পূর্ব পাহাড়তলী বধ্যভূমি ও হালিশহর মধ্যম নাথপাড়া বধ্যভূমিতে স্মৃতিচিহ্ন আছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পেছনে আরেকটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এই নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর ৬১টি বধ্যভূমির মাত্র তিনটিতে স্মৃতি চিহ্ন নির্মিত হচ্ছে। বাকি ৫৮টি বধ্যভূমিতে এখনও কোনও স্মৃতি চিহ্ন নেই।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বধ্যভূমি হলো-মহামায়া ডালিম হোটেল বধ্যভূমি, গুডসহিল বধ্যভূমি, পশ্চিম পাহাড়তলী বধ্যভূমি, দক্ষিণ বাকলিয়া মোজাহের উলুম মাদরাসা বধ্যভূমি, চাক্তাই খালপাড় বধ্যভূমি, চামড়ার গুদাম চাক্তাই খাল পাড় বধ্যভূমি, তুলশি ধাম সেবায়েত মন্দির বধ্যভূমি, হাইওয়ে প্লাজা ভবন বধ্যভূমি, বাটালী পাহাড়ের রেলওয়ে বাংলো বধ্যভূমি, পাঁচলাইশ সড়কের আল বদর বাহিনী ক্যাম্প বধ্যভূমি, চট্টগ্রাম জেনারেল পোস্ট অফিস বধ্যভূমি, সিআরবি নির্যাতন কেন্দ্র বধ্যভূমি, চন্দনপুরা রাজাকার ক্যাম্প বধ্যভূমি, সার্কিট হাউজ বধ্যভূমি, বন্দর আর্মি ক্যাম্প বধ্যভূমি, রেলওয়ে ওয়ার্কশপ বধ্যভূমি, প্রবর্তক সংঘের পাহাড় বধ্যভূমি, সদরঘাট রাজাকার ক্যাম্প বধ্যভূমি ও ঝাউতলা বিহারী কলোনি বধ্যভূমি।

এ সর্ম্পকে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ গবেষণাকেন্দ্রের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘৪ থেকে ৫ বছর আগে বধ্যভূমি, সম্মুখযুদ্ধের স্থান, এরপর যে বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা থাকতেন ওই বাড়ির সামনে ছোট করে নামফলক দেওয়া অথবা চিহ্ন করার জন্য আমরা জেলা প্রশাসনকে একটি তালিকা দিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলোর একটিও হয়নি। নাথপাড়ার বধ্যভূমিতে যে স্মৃতিচিহ্ন আছে সেটিও আমরা কয়েকজন উদ্যোগ নিয়ে তৈরি করেছিলাম। এখন মেডিক্যাল এলাকায় বধ্যভূমিতে সিটি করপোরেশন যে স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণ করতে যাচ্ছে, এটি অনেক দৌড়াদৌড়ির পর নির্মিত হতে যাচ্ছে। মাহবুব নামে একজনকে ওই বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়, তার ছোট ভাই অনেক চেষ্টা চালিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যতিক্রম কয়েকজন ছাড়া প্রশাসনের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উদাসীন এবং বধ্যভূমিতে স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণকে অপ্রয়োজনীয় মনে করছেন। প্রশাসনের সুদূরপ্রসারী চিন্তা না করার কারণেই স্মৃতিচিহ্ন এখনও নির্মিত হয়নি। না হওয়ার ফল হলো বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে টানাটানি। তাই সব বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলেও উল্লেখযোগ্য কয়েকটিকে সংরক্ষণ করা খুব জরুরি। এসব বিষয় জানার মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। এ দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।’

মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পরও কেন বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে না জানতে চাইলে ড. গাজী সালেহ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যার রক্ত গেছে, তিনি বুঝেন। যারা এখন রাজনীতি করছেন, যারা দেশ শাসন করছেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া তাদের কারও রক্ত যায়নি। তাই বধ্যভূমি কোথায় সংরক্ষণ হলো, না হলো। এ নিয়ে তাদের কোনও গরজ নেই। রাজনীতিবিদ হোক আর আমলা হোক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে আমরা মুখে বলি, কিন্তু অন্তরে ধারণ করি না। এ কারণেই এখন বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি। স্মৃতি চিহ্নও নির্মিত হয়নি।’

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফ্ফর আহমেদ বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার এত বছর পরও চট্টগ্রামে কোনও বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা হয়নি। আমরা অসংখ্য চিঠি চালাচালি করেছি। আমি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আছি ২০ বছর। এই ২০ বছরে বধ্যভূমি সংরক্ষণের দাবিতে অনেক মিছিল-মিটিং করেছি। প্রশাসনকে বধ্যভূমির তালিকা দিয়েছি। যখন তালিকা দিই তখন একটু তোড়জোড় শুরু হয়। এরপর আবার থেমে যায়। বধ্যভূমি সংরক্ষণের প্রশাসনের তেমন কোনও আগ্রহ নেই। বধ্যভূমি হোক আমলারা এটা চায় না। প্রশাসনের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী না, এমন কিছু আমলা ঘাপটি মেরে আছে। এ কারণে বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে না।’

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION